শ্রাব্যতার সীমা ও অপ্রীতিকর শব্দ বা নয়েজ (noise) (পাঠ ৮-৯)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান শব্দের কথা | - | NCTB BOOK
72
72

আমরা জানি যে, কোনো বস্তুর কম্পনের ফলে শব্দের উৎপত্তি হয়। সকল কম্পনশীল বস্তুর শব্দ কি আমরা শুনতে পাই? না, সকল কম্পনশীল বসতুর শব্দ আমরা শুনতে পাই না। যে শব্দ প্রতি সেকেন্ডে ২০টির কম কম্পন দিয়ে সৃষ্টি হয়, তা আমরা মানুষেরা শুনতে পাই না। এরকম শব্দ শ্রবণ উপযোগী নয়। এরকম শব্দকে শ্রুতিপূর্ব শব্দ বলা হয়। আবার অনেক বেশি কম্পনের ফলে সৃষ্ট শব্দকে আমরা শুনতে পাই না। প্রতি সেকেন্ডে ২০,০০০-এর বেশি কম্পনের ফলে সৃষ্ট শব্দকেও আমরা শুনতে পাই না। একে শ্রুতি-উত্তর শব্দ বলা হয়। সুতরাং মানুষের জন্য শ্রাব্যতার সীমা হলো প্রতি সেকেন্ডে ২০ থেকে ২০,০০০ কম্পন দিয়ে সৃষ্ট শব্দ। প্রতি সেকেন্ডে কোনো বস্তু যতটা কম্পন দেয় তাকে বলা হয় ঐ বস্তুর কম্পাঙ্ক। এই কম্পাঙ্ক প্রকাশের একক হলো হার্জ (Hertz)। কোনো বস্তু সেকেন্ডে ২০ বার কাঁপলে তার কম্পাঙ্ক ২০ হার্জ, ২০,০০০ বার কাঁপলে ২০,০০০ হার্জ। সুতরাং মানুষের কানের শ্রাব্য কম্পাঙ্কের সীমা ২০ হার্জ থেকে ২০,০০০ হার্জ। এই সীমার মধ্যে কম্পাঙ্কের শব্দকে শ্রাব্য শব্দ বলে।

কোনো কোনো প্রাণী ২০,০০০ হার্জ কম্পাঙ্কের চেয়ে বেশি কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পায়। কুকুরের এই ক্ষমতা আছে। পুলিশ অতি উচ্চ কম্পাঙ্কের হুইসেল ব্যবহার করে যা কুকুর শুনতে পায় কিন্তু মানুষ শুনতে পায় না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক অতিশব্দ (শ্রুতি-উত্তর শব্দ ব্যবহারকারী) যন্ত্রের সাথে আমরা পরিচিত। এরকম একটি যন্ত্র হলো আল্ট্রাসনোগ্রাম। এ যন্ত্র ২০,০০০ হার্জের চেয়ে বেশি কম্পাঙ্কের শব্দের সাহায্যে কাজ করে।

সুশ্রাব্য শব্দ ও নয়েজ: আমাদের চারপাশে আমরা নানারকম শব্দ শুনতে পাই। এদের মধ্যে অনেক শব্দ শুনতে ভালো লাগে, সুখকর ও আনন্দদায়ক। এরকম শব্দ হলো গানের সুর, বাঁশির সুর, হারমোনিয়ামের শব্দ, সেতারের বাজনা ইত্যাদি। এরকম শব্দ সুশ্রাব্য বা সুরেলা। অনেক শব্দ শুনতে কষ্ট লাগে, যন্ত্রণাদায়ক ও বিরক্তিকর। এরকম শব্দ হলো পেরেক ঠোকার শব্দ, নির্মাণ কাজের শব্দ, বোর্ডে লেখার সময় চকের কিচকিচ্ শব্দ, ইত্যাদি। যে শব্দ শুনতে ভাল লাগে, সুখকর, মধুর ও আনন্দদায়ক তাদের সুশ্রাব্য বা সুরেলা শব্দ বলে। বস্তুর নিয়মিত বা সুষম কম্পনের ফলে সুশ্রাব্য শব্দ উৎপন্ন হয়। যে শব্দ শুনতে কষ্ট লাগে, যন্ত্রনাদায়ক ও বিরক্তিকর তাদের অপ্রীতিকর শব্দ বা নয়েজ বলে।

শব্দ দূষণ: আমরা সবাই পানি দূষণ ও বায়ুদূষণের সাথে পরিচিত। পানিতে যা যা থাকা উচিত তা না থেকে যদি অন্য কিছু থাকে, তা হলে তাকে আমরা পানিদূষণ বলি। বায়ুতে যা যা থাকা উচিত তা না থেকে যদি অন্য কিছু থাকে তা হলে তাকে আমরা বায়ুদূষণ বলি। এরকম আমাদের পরিবেশে যদি অতিরিক্ত বা অবাঞ্ছিত শব্দ থাকে, তখন তাকে বলি শব্দদূষণ। শব্দদূষণের প্রধান প্রধান কারণ হলো গাড়ির শব্দ, কোনো বিস্ফোরণের শব্দ (পটকা বা বোমা ফাটার শব্দ), কোনো যন্ত্রের শব্দ, মাইকের শব্দ, নির্মাণ কাজের শব্দ। এছাড়া টেলিভিশন ও রেডিয়ো জোরে বাজানোর শব্দ, রান্না ঘরের জিনিসপত্রের শব্দ, এয়ারকুলারের শব্দ, ইত্যাদি শব্দদূষণের কারণ।

কাজ: তোমার এলাকায় শব্দদূষণের কারণগুলো চিহ্নিত কর এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে কারণগুলো খাতায় লেখ। ৫/৬ জনের দল করে এ কাজটি করতে পার।

শব্দ দূষণের ফলে কী ক্ষতি হয়?

তোমরা কি জানো, চারপাশের অতিরিক্ত শব্দ নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে। এসব সমস্যা হলো, অনিদ্রা, মাথা ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, বিরক্তি, দুর্ভাবনা ও আরও অনেক রকম সমস্যা। কোন মানুষ অনেক দিন অতিরিক্ত জোরালো শব্দ শুনলে কান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং সে কানে কম শুনতে পারে বা নাও শুনতে পারে।

শব্দদূষণ কীভাবে রোধ করা যায়?
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে শব্দের উৎসকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এটা কীভাবে করা যায়? কোনো আবাসিক এলাকায় শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে

  • অপ্রীতিকর শব্দ বা নয়েজ সৃষ্টিকারী সব কিছুকে এলাকার বাইরে রাখতে হবে।
  • অপ্রীতিকর শব্দ বা নয়েজ সৃষ্টিকারী কোনো কলকারখানা আবাসিক এলাকায় স্থাপন করা যাবে না।
  • যানবাহনের হর্ন যতটা সম্ভব কম বাজাতে হবে।
  • রেডিয়ো, টেলিভিশন ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র উচ্চ শব্দে বাজানো যাবে না।
  • রাস্তার পাশে, ঘরবাড়ির চার দিকে গাছপালা লাগাতে হবে, যাতে ঘরবাড়িতে শব্দ কম পৌঁছায়।

এছাড়া শব্দদূষণ রোধ করতে বিমানের ইঞ্জিন, যানবাহনের ইঞ্জিন এবং কলকারখানার মেশিনে সাইলেনসার লাগাতে হবে। সাইলেনসার হলো এমন একটি ব্যবস্থা যা উৎপন্ন শব্দকে বাইরে যেতে দেয় না।

common.content_added_and_updated_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion